-->

ব্রেকিং নিউজ

হাসপাতালে বিচানায় অসুস্থ্য শিশু মোবাইল আসক্তি: অন্ধত্বের ঝুঁকিতে শিশুরা!

সত্যনিউজঃ একটি বেসরকারি হাসপাতালে এ শিশু অসুস্থতার কারনে ভর্তি হয়।সে মোবাইল ছাড়া তার এক মুহুর্ত চলেনা। মা বাবা আদর করে তাকে বেশি বেশি মোবাইল ব্যবহার করতে দেন, তারা কোন রকম বাধা দেননা। তিন বেলা খাওয়ার সময় মোবাইল দেয়া হয় তার হাতে। এ ছাড়াও অনেক সময় তাকে মোবাইলে বিভিন্ন কার্টুন দেখতে দেয়া হয়। বলা যায়, দিনের প্রায় ৩ ঘণ্টা সে মোবাইলে চোখ রাখে। এতে সে মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে সম্পূর্ণরূপে। সারা দেশে মোবাইল ফোনের অপব্যবহার যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উৎকর্ষতা লাভের ফলে নতুন প্রযুক্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেই যন্ত্রপাতির ব্যবহারে ভয়াবহ সমস্যার জালে পড়েছে সমাজ। আর এর অপব্যবহারের প্রধান শিকার শিশু, উঠতি বয়সের কিশোর কিশোরীরা।
sottonews_health 

শিশু বিশেষঞ্জ চিকিৎসকরা বলছেন, প্রযুক্তির এ আসক্তি শিশুদের জীবনে বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবও ফেলছে। অতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার ও তা থেকে নির্গত আলো চোখের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি করে। ফলে কমছে দৃষ্টি শক্তি। এমনকি দৃষ্টিশক্তি একেবারেই কমে গিয়ে অন্ধত্বের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া সেই আলো চোখের জন্য শুধু ক্ষতিকরই নয়, বিষাক্তও বটে। এতে করে ঘাড়ে ব্যথা, মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনও হতে পারে। আবার দীর্ঘসময় বসে থাকতে শিশুর স্থূলতাও বেড়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে শিশুর চিন্তা বা কল্পনাশক্তিও। এ ছাড়া সব ধরনের গ্যাজেটের ওপরই শিশুদের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা খারাপ। তাই শিশুকে খুব বেশি সময় কোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে দেয়াও ঠিক নয়।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নূজহাত চেীধুরী ভোরের কাগজকে জানান, মোবাইলের পর্দা থেকে যে নীল আলো বরিয়ে আসে, তা আমাদের চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ১০ থেকে ১৫ মিনিট টানা এই আলো সরাসরি চোখের ওপর পড়লে চোখের ভেতরে থাকা পানির স্তর শুকিয়ে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে চাপ বাড়তে থাকে রেটিনার ওপরও। অনেক সময় চোখ এতটাই ড্রাই হয়ে যায় যে, চোখের মানি ধরে রাখার লেয়ার নষ্ট হয়ে যায়। এতে অঝরে পারি ঝরতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে শুরু করে। তিনি বলেন, মোবাইলে শিশুরা আসক্তির আরো অনেক কারণ আছে। কিছু বাবা-মা তার চঞ্চল শিশুকে নিয়ন্ত্রণ করতে মোবাইল দিয়ে বসিয়ে দেন। ফলে সেই শিশু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্পগুজব করা, প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়া, খেলাধুলা করা, প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে চেনা, সবার সঙ্গে মিশতে পারার দক্ষতা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে। এর জন্য শুধু বাবা মা- নয় আমাদের পুরো সমাজ ব্যবস্থাই দায়ী।



ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশুরোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. সাইফুর রহমান জানান, বয়স্কদের চেয়ে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম আর মস্তিষ্কের কোষও নরম। মোবাইল ফোন থেকে বিক্রীত হওয়া রেডিয়েশনে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাপন ব্যবস্থায় শিশুদের অতি মাত্রায় ইলেক্ট্রনিক গেজেট আসক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে প্রধান বাধা। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর প্রায় ৮৫ ভাগ মস্তিষ্ক বিকশিত হয়। ব্রেইনের এই গঠনের ফলে পরবর্তী সময়ে একজন শিশুর সুস্থ বিকাশকে প্রভাবিত করে। অন্য দিকে বর্তমানে একটি শিশু যখন মোবাইল-ট্যাব বা টিভির পর্দায় সর্বদাই চোখ রাখে তখন তার ব্রেইন রিয়েল ওয়ার্ল্ডের চেয়ে ৮ গুণ কম কাজ করে। আর এ আসক্তির ফলে শিশুটি অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন বাইরের জগতকে মানে স্বাভাবিক জগতের চরিত্রগুলোকে সহজভাবে নিতে পারে না। আর এর ফলে নানা রকম শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হয়।

স্বাস্থ্য বিশেষঞ্জ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বেশির ভাগ শিশুরাই খেলার ছোলে ব্যবহার করে এই প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রটি। মোবাইল শুধু শিশুদের হাতে গেম খেলে সময় নষ্ট করবে এটা কোনো ভালো বিষয় নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে গেম খেলা বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকা শিশুর মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির কারণ। শিশুদের এসব ডিভাইসের হাত থেকে রক্ষা করতে বাবা-মাকেই এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানকে সৃজনশীল বই পড়াতে হবে, তাদের নিয়ে বেড়াতে যেতে হবে, তাদের খেলাধুলায় আগ্রহী করতে হবে। ব্যস্ততা বা কাজের দোহাই দিয়ে সন্তানকে সময় না দেয়াটা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান যুগে মোবাইল অনেকটা প্রয়োজনীয় বস্তু। তাই বড়দের মতো শিশুরাও মোবাইল ব্যবহার করবে এবং এর ভালো দিকগুলো জানবে, এটা আমাদের কাম্য। তাই আগামী প্রজন্মকে সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত শিশুদের মোবাইল থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

1 comment:

Thanks for Commends